আমদানি-রপ্তানিসহ সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা
এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনে অচল বন্দর
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৫-০৫-২০২৫ ১২:১৭:৩০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৫-০৫-২০২৫ ১২:১৭:৩০ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত ঘোষণা করে সরকারের জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে বিগত ১০ দিন ধরে চলা আন্দোলন আরও জোরদার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। লাগাতার এ আন্দোলনে দেশের প্রধান প্রধান বন্দরগুলোতে আমদানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। যে উপক্রম দেখা যাচ্ছে, তাতে দেশের অর্থনীতির ওপর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন শিল্পসংশ্লিষ্টরা।
এরই মধ্যে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এনবিআর কর্মকর্তাদের প্ল্যাটফর্ম 'এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ' ঘোষণা করেছে, আগামীকাল সোমবার (২৬ মে) থেকে আমদানি-রপ্তানির ছাড়পত্রসহ সব ধরনের শুল্ক কার্যক্রম স্থগিত রাখা হবে। কেবল আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিবহন এর আওতামুক্ত থাকবে।এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে গতকাল (২৪ মে) বিকেল ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে পুরোপুরি বন্ধ ছিল আমদানি কার্যক্রম। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্যই পরিচালিত হয় এ বন্দর দিয়ে। বেনাপোল কাস্টম হাউসও কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। তবে, ঢাকা কাস্টম হাউসে সীমিত পরিসরে কাজ চলছে। পাশাপাশি সারাদেশেই কর ও ভ্যাট অফিসের কার্যক্রমও স্থগিত রয়েছে।
আকস্মিক এ অচলাবস্থায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে। বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কায় বিদেশি ক্লায়েন্টরা যোগাযোগ করছেন। শিল্প নেতারা সতর্ক করে বলেছেন, যদি এই ব্যাঘাত দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ ব্যাপারে বলেন, শনিবার আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল এবং সোমবার থেকে পুরোপুরি স্থগিতাদেশ কার্যকর হতে পারে। যদি এমনটা ঘটে, তাহলে প্রতিদিন অর্থনীতিতে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। চালান আসা সম্ভব হচ্ছে না বলে অর্ডার বাতিল ও মূল্যছাড় না পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিচ্ছে। এতে করে বিশ্ববাজারে আমাদের সুনাম চরম ঝুঁকিতে পড়বে।
চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম বলেন, ধর্মঘটের কারণে বন্দর কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। যানজট ও স্টোরেজ ফিসহ বিভিন্ন কারণে আমদানিকারকদের বিশাল ব্যয় গুনতে হচ্ছে।চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন আমদানি-রপ্তানি বোঝাই ও খালি কনটেইনার পরিচালিত হয়। ২০২৪ সালে বন্দরটি ৩.২৭৬ মিলিয়ন টিইইউ (কুড়ি-ফুট সমতুল্য একক) কনটেইনার এবং ১২৪ মিলিয়ন টন পণ্য প্রক্রিয়াজাত করেছে। এই সময়ে বন্দরে ভিড়েছে ৩ হাজার ৮৬৭টি বাণিজ্যিক জাহাজ।চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৭৮.৭ মিলিয়ন টন পণ্য আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে আমদানিকৃত ৭৪ মিলিয়ন টনের চেয়ে বেশি। এই ১০ মাসে কাস্টম হাউসটি ৬২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। দৈনিক গড় আদায় ছিল ১ হাজার ৯০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৮ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা।
এদিকে, গত ১৩ মে থেকে ১৯ মে বিকেল ৩টা পর্যন্ত আমদানি ছাড়পত্র স্থগিত থাকায় বন্দরে ৪ হাজারের বেশি কনটেইনার আটকে পড়েছে।বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, প্রয়োজনে যতক্ষণ পর্যন্ত সমাধান পাওয়া না যায়, অধ্যাদেশটি স্থগিত রাখা উচিত। এই অচলাবস্থা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের মধ্যে নেতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে, যার প্রভাবে তারা অর্ডার কমিয়ে দিতে পারেন।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স